উপক্রমণিকা
সিলেটের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান মদনমোহন কলেজ এ বছর ৭৪ বছরে পা রেখেছে। আগামী ২০১৫ সালে এ প্রতিষ্ঠান তার গৌরবময় ডায়মন্ড জুবিলি (৭৫ বছর পূর্তি) উদযাপন করবে। ১৮৯২ সালে সিলেট অঞ্চলের সর্বপ্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুরারিচাঁদ কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তার ৪৮ বছর পর অর্থাৎ ১৯৪০ সালের জানুয়ারি থেকে সিলেট শহরে লামাবাজার এলাকায় বাণিজ্য শাখায় অধ্যয়নের সুযোগ সংবলিত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মদনমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠা পায়। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এই প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোজন নিয়ে এ অঞ্চলের শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ১৯৯০-এর দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোজন নিয়ে এ কলেজে হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে অনার্স কোর্স চালু হয়। পরবর্তীতে অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা ও দর্শন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশেষত দেশের অন্যতম সেরা কমার্স কলেজ হিসেবে এর সুনাম-সুখ্যাতি সুবিদিত।
মদনমোহন দাস ও মদনমোহন কলেজ
সিলেট শহরের সমৃদ্ধ মহল্লা মির্জাজাঙ্গাল-এর সাহাজি পরিবার এক ধন্যাঢ্য পরিবার। এই পরিবারের দুলালচন্দ্র দাস ছিলেন এক বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তাঁর জন্ম। পরিবারের বিষয়-সম্পত্তি ও ব্যবসায় পরিচালনা তাঁর ওপরই ন্যস্ত ছিল। দুলালচন্দ্র দাসের দুসন্তান ছিলেন। জ্যৈষ্ঠ সন্তান মদনমোহন দাস এবং কনিষ্ঠ সন্তান আরাধন দাস। আরাধন দাস আবার অকৃতদার ছিলেন।
দুলালচন্দ্র দাসের জ্যৈষ্ঠপুত্র মদনমোহন দাস ছিলেন প্রখর মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত লোক। ছাত্রাবস্থায় তাঁর মেধার পরিচয় মেলে। সিলেট শহরের হজরত শাহজালালের মাজার সংলগ্ন দরগাহ মহল্লা স্কুল থেকে তিনি ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে মাইনর বৃত্তি লাভ করেন। তিনি সরকারি হাই স্কুল থেকে ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে কৃতিত্বের সঙ্গে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এসময় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এন্ট্রান্স পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো।
এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশের পর মদনমোহন দাস পৈতৃক বিষয়াদি দেখাশোনায় মনোযোগী হন। এভাবে বছর কয়েক চলে যায়। ব্রিটিশ শাসনাধীনে চাকরি পাওয়া খুব কঠিন ছিল। তাঁর জীবনে চাকরির সে সুযোগও আসে। সিলেট কালেক্টরেট অফিসে ল্যান্ড রেভিনিউ কার্ক হিসেবে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়। ১৮৮৭ সালের ১৭ মে তিনি ‘সিলেট ল কাস’-এ দুবছর মেয়াদি ল লেকচার-এ অংশ গ্রহণ করেন। সম্ভবত বর্তমানে আইন কলেজের সমমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই ‘সিলেট ল কাস’ খ্যাত ছিল। সিলেট শহরের ‘ শ্রীহট্ট টাউন হলে প্রবীন আইনজীবীদের পরিচালনায় ‘সিলেট ল কাস’ তার কার্যনির্বাহ করতো বলে জানা যায়। আর দরগাহ মহল্লা স্কুলটি সম্ভবত রাজা গিরিশচন্দ্র হাইস্কুলের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়।
মদনমোহন দাসের জন্মসাল কত ছিল তার লিখিত কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর মৃত্যু তারিখ যে ২৬ জানুয়ারি ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ এটা নির্দ্বিধায় স্বীকার্য সত্য। এ প্রসঙ্গে আমরা পরে আসছি। পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাইনর বৃত্তি লাভ করেন। সে সময়কার ‘মাইনর’ বর্তমান অষ্টম শ্রেণির সমপর্যায়। সে হিসেব অনুসারে ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর এন্ট্রাস পরীা পাশ নিঃসন্দেহে যৌক্তিক এবং এ সংক্রান্ত সনদপত্র মদনমোহন দাসের পৌত্র সুখেন্দুবিকাশ দাস (জন্ম ১৯৩০ খ্রি.)-এর নিকট সংরতি আছে। এন্ট্রাস পরীক্ষা বর্তমানের স্কুল সার্টিফিকিট পরীক্ষার সমতুল্য। সেই বিবেচনায় একজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর বয়স সাধারণত ১৫ বছর হয়ে থাকে। তাই ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫ বছর বিয়োগ করলে ১৮৫৬ সালকে মদনমোহন দাসের জন্মসাল হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
ব্যক্তিগত জীবনে মদনমোহন দাস তিনটি বিয়ে করেন। প্রথম পরে স্ত্রীর গর্ভে তাঁর তিন পুত্রসন্তান এবং এক কন্যাসন্তান। প্রথম পরে সন্তানেরা হলেন মোহিনীমোহন দাস (১৮৮৯-১৯৪৪ খ্রি.) যোগেন্দ্রমোহন দাস (১৮৯৪-১৯৮৬ খ্রি.), সৌরিন্দ্রমোহন দাস এবং এক কন্যা (যার নাম জানা যায়নি)। দ্বিতীয় পরে স্ত্রীর গর্ভে এক পুত্র প্রফুল্লচন্দ্র দাস ও অপর দুই মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তৃতীয় পরে স্ত্রীর গর্ভে কেবল দুই কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য যে, মদনমোহন দাসের সুযোগ্য সন্তান মোহিনীমোহন দাস এন্ট্রাস পাশের পর তাঁর পৈতৃক ব্যবসায় দেখাশোনা করতেন। তাঁর ভাই যোগেন্দ্রমোহন দাস ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর কিছুদিন রাজা গিরিশচন্দ্র হাই স্কুলে শিকতা করেন। এই দু ভাইয়ের বদান্যতায় এবং নিবেদিতপ্রাণ অধ্যাপক প্রমোদচন্দ্র গোস্বামীর প্রচেষ্টায় সিলেট শহরের লামাবাজারে মদনমোহন দাসের এই উত্তরসুরি প্রদত্ত এক বিঘা ভূমি ও নগদ বারো হাজার টাকার ওপর যে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় তার নাম ‘মদনমোহন কলেজ’। প্রয়াত মদনমোহন দাসের পুত্র মোহিনীমোহন দাস ও যোগেন্দ্রমোহন দাস তাঁদের পিতার স্মৃতি রার্থে যে ভূমি ও নগদ অর্থ দান করেন তার আনুষ্ঠানিক দলিল (উববফ) সম্পাদিত হয় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুলাই। ছয়পৃষ্ঠা ব্যাপী সম্পাদিত দলিলে দাতা হিসেবে মোহিনীমোহন দাস ও যোগেন্দ্রমোহন দাসের স্বার রয়েছে এবং ট্রাস্টি হিসেবে যারা স্বার করেন তারা হলেন রায়বাহাদুর প্রমোদচন্দ্র দত্ত (সাবেক মন্ত্রী), বসন্তকুমার দাস (আসাম আইন পরিষদের স্পিকার ও মন্ত্রী), রায়বাহাদুর বৈকুণ্ঠনাথ ভট্টাচার্য। উক্ত দলিলে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন বৈদ্যনাথ মুখার্জি, প্রমোদচন্দ্র গোস্বামী (প্রতিষ্ঠাতা অধ্য : মদনমোহন কলেজ, সিলেট) ও রাজকুমার ভট্টাচার্য।
মোহিনীমোহন দাস তাঁর মৃত্যুর চার বছর পূর্বে তাঁর ভাই যোগেন্দ্রমোহন দাসকে নিয়ে তাঁদের পিতার স্মৃতি রাক্ষার্থে যে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন আজ তা বিরাট শিক্ষাঙ্গন হিসেবে দেশজুড়ে সুনাম কুড়াচ্ছে। অবশ্য কালক্রমে এর সঙ্গে অনেক দানশীল ব্যক্তির অবদান যুক্ত হয়েছে নানাভাবে। প্রথমত যাঁরা এই অসামান্য অবদানের মাধ্যমে অগ্রণী হয়ে আছেন তাঁদের ঋণ অপরিশোধ্য। মদনমোহন দাস তাই আমাদের অসংখ্য শিক্ষার্থীর আলোর উৎস এবং তার যোগ্য সন্তানেরা এ অঞ্চলের শিােেত্র আলোকদিশারী হয়ে সবার অন্তরে বেঁচে থাকবেন।
কলেজের অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ ও কতিপয় শিক্ষক
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রমোদচন্দ্র গোস্বামী মুরারিচাঁদ কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। সে সময় মুরারিচাঁদ কলেজে বিজ্ঞান এবং মানবিক/কলা শাখায় অধ্যয়নের সুযোগ ছিল। ব্যবসায়শিা শাখায় অধ্যয়নের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় এ অঞ্চলের শিানুরাগী ব্যক্তিবর্গ মদনমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের অগণিত শিার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনকে আলোকময় করে তোলেন। সরকারি কলেজের (মুরারিচাঁদ কলেজ) চাকুরি ছেড়ে প্রমোদচন্দ্র গোস্বামী মদনমোহন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্য হিসেবে যোগ দেন। তাঁর আত্মত্যাগ, ঔদার্য, সংবেদনশীলতা এবং সর্বোপরি শিার্থীদের প্রতি অপরিসীম দরদ এ প্রতিষ্ঠানকে মহিমা দান করে। তাঁর পরে যিনি অধ্য হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন তিনি হচ্ছেন আরেক নিবেদিতপ্রাণ শিক কৃষ্ণকুমার পালচৌধুরী। তাঁর ব্যক্তিপ্রভায় এ অঞ্চলের শিার্থীরা আলোকদীপ্তি লাভ করে। তাঁর পরে অধ্য সৈয়দ আবদুস শহীদ, অধ্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মুহিবুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত), মো. আতাউর রহমান পীর অধ্য পদে আসীন হন। এ কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কৃপাসিন্ধু পাল উপাধ্যক্ষ পদে নিযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অধ্য পদ থেকে তিনি ৩০ জুন ২০১২ অবসর নেন। পয়লা জুলাই ২০১২ তারিখে উপাধ্য ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে দায়িত্ব নেন এবং ৭ এপ্রিল, ২০১৩ পূর্বাহ্ন পর্যন্ত তিনি এ পদে আসীন থাকেন। কলেজ গভর্নিংবডি কর্তৃক গঠিত অধ্য নিয়োগ-নির্বাচনী বোর্ড অধ্যাপক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ-কে এ কলেজের চতুর্দশ অধ্যরূপে মনোনীত করে এবং ড. ফাত্তাহ ৭ এপ্রিল, ২০১৩ অপরাহ্নে এ কলেজের অধ্য পদে যোগ দেন।
উল্লেখ্য যে, অধ্য কৃষ্ণকুমার পালচৌধুরীর সময় কলেজের শিাপরিবেশ ও ভৌতঅবকাঠামো বৃদ্ধি পায়। অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুস শহীদের তিলে তিলে জমানো তহবিল থেকে পরবর্তীতে কলেজের শিক্ষক-আবাসসহ অন্যান্য স্থাপনার কাজ অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর মাধ্যমে সংগঠিত হয়। নজরুল ইসলাম চৌধুরী একজন উদ্যমী ও সাহসী অধ্য ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় এ কলেজ অনার্স কলেজ হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে অনেক খ্যাতিমান ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক যোগ দেন। যাঁরা পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতির চরম শিখরে আরোহণ করেন।
এ কলেজের উপাধ্য পদে যাঁরা আসীন হন তাঁরা হলেন গিরিজাভূষণ চক্রবর্তী, আবদুল মালিক চৌধুরী, সৈয়দ আবদুস শহীদ, মো. মসউদ খান, প্রণবকুমার সিংহ, সুষেন্দ্রকুমার পাল (অন্যতম), মুহিবুর রহমান, কৃপাসিন্ধু পাল, ড. মো. আবুল ফতেহ, সর্ব্বাণী অর্জ্জুন ও মো. রফিকুল ইসলাম (উপাধ্যক্ষ অ্যাকাডেমিক)। উল্লেখ্য যে, অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বিশ্বনাথ দে, দর্শন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নীলকান্ত দে ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. ফজলুল হক ভারপ্রাপ্ত উপাধ্য হিসেবে কিছুকাল দায়িত্ব পালন করেন।
এ প্রসঙ্গে এ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শিক ও পরবর্তীতে খ্যাতিমান কয়েকজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ অপরিহার্য। তাঁরা হলেন মধ্যে অধ্য প্রমোদচন্দ্র গোস্বামী, ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপক সুনীতিকুমার ঘোষ, যুক্তিবিদ্যার অধ্যাপক গুরুসদয় ভট্টাচার্য, পৌরনীতির অধ্যাপক সুশান্তকুমার চৌধুরী, গণিতের অধ্যাপক অশ্বিনীকুমার দাস, ইতিহাসের অধ্যাপক কিরণচন্দ্র চৌধুরী, সংস্কৃত ও বাংলার অধ্যাপক জগদীশচন্দ্র ভট্টাচার্য, কমার্সের অধ্যাপক রাকেশচন্দ্র রায়, ফারসি ও আরবির অধ্যাপক মৌলভী আবদুল মালিক চৌধুরী।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জগদীশ ভট্টাচার্য পরবর্তী জীবনে রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ ও খ্যাতিমান সাহিত্য-সমালোচক হিসেবে সমধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেন। ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কিরণচন্দ্র চৌধুরী পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ও শিাবিভাগের উচ্চতর পদে আসীন হন। দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও তিরিশোত্তর কবি অশোকবিজয় রাহা পরবর্তী জীবনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। এছাড়া অধ্যাপক কৃপেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী একজন সফল অনুবাদক হিসেবে কৃতিত্বের পরিচয় দেন। অধ্য কৃষ্ণকুমার পালচৌধুরী, অধ্যাপক এ এ আবদুল হাফিজ, অধ্যাপক মুফতি ফখর উদ্দিন আহমদ, প্রফেসর অ্যামেরিটাস মো. আবদুল আজিজ (সাবেক উপাচার্য, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি), অধ্যাপক আতাউল হক চৌধুরী, অধ্যাপক বিজিতকুমার দে, উপাধ্যক্ষ প্রণবকুমার সিংহ প্রমুখ শিক্ষকবৃন্দ তাঁদের মেধা ও মননচর্চার মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানকে সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যান। নাটক-ক্রীড়া ও সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ শিকক্ষদের মধ্যে উপাধ্যক্ষ সুষেন্দ্রকুমার পাল, অধ্যাপক মো. আকরাম আলী, অধ্যাপক বিশ্বনাথ দেঅধ্যাপক মোহাম্মদ শফিক, অধ্যাপক বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, অধ্যাপক আ.স. বজলুর রহিম, অধ্যাপক গ.ক.ম আলমগীর এবং কলেজের গ্রন্থাগারীক মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নাম উল্লেখের দাবি রাখে।
কলেজবার্ষিকী ‘দিশারী’, সাহিত্য-সংস্কৃতি স্মারক ‘ঈষিকা’, সুবর্ণ জয়ন্তী স্মারক ‘এই আঙিনায়’ (১৯৯০), তারাপুর ক্যাম্পাস থেকে প্রকাশিত ভ্রমণ স্মারক ‘মেঘের পালক’, একাদশ শ্রেণি ওরিয়েন্টেশন স্মারক ‘তোমার মুক্তি আলোয় আলোয়’, আবুল মাল আবদুল মুহিত সংবর্ধনা স্মারক ‘আলার সারথি’সহ মদনমোহন কলেজ সাহিত্য পরিষদ প্রকাশিত একাধিকগ্রন্থ সাহিত্যপ্রেমীদের জন্যে এক আকর্ষণীয় বিষয়। এছাড়া, অনিয়মিত কিছু সাহিত্যপত্র ছাত্র-শিকের সহায়তায় প্রকাশিত হয়ে থাকে। খেলাধুলা, নাটক ও বিএনসিসি-রোভার স্কাউট কার্যক্রমে এ কলেজের রয়েছে সুনাম-সুখ্যাতি।
উপসংহার
ভীরু পায়ে যে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল কালের বিচারে সেটি আজ গৌরবের ৭৪ বছরে পূর্ণ করছে। ২০১৫ সালে এ প্রতিষ্ঠান তার গৌরবের হীরকজয়ন্তী পালনের প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করেছে। অগণিত শিার্থী, সবিদ্য শিক্ষক আর উৎসাহী অভিভাবকদের মেলবন্ধনে মদনমোহন কলেজ আজ এক বিরাট মহীরূহ রূপে পরিগণিত হয়েছে। লামাবাজার মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও এ কলেজের আরেকটি ক্যাম্পাস নগরীর তারাপুরে অবস্থিত। কলেজ-পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে বিগত সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী আবুল মাল আবদুল মুহিত সভাপতি হিসেবে আসীন রয়েছেন। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে যে সব গণপ্রতিনিধি এ কলেজের পরিচালনা পর্ষদ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তাদের মধ্যে আসামের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী রায়বাহাদুর প্রমোদচন্দ্র দত্ত, মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী, স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর মনোনীত প্রতিনিধি সৈয়দা জেবুন্নেছা হক এমপি প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, শিক্ষকপর্ষদ, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দসহ অসংখ্য শিক্ষার্থীর প্রাণম্পন্দনে এই আঙিনা আজ মুখরিত। বর্ণিল সময়ের গতিধারায় এ প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালে ৭৫ বছরে উন্নীত হবে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয় জীবনে এই প্রতিষ্ঠানের অসামান্য অবদান আজ সত্যিই ঈর্ষণীয়।