শিক্ষা জীবন
তার জন্ম বাংলাদেশের সিলেট (সাবেকঃ শ্রীহট্ট) জেলায়। আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ঐ বিষয়ে প্রথম শ্রেণী পেয়ে কৃতকার্য হন এবং একই বিষয়ে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। বিদেশে চাকুরীরত অবস্থায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন তিনি। অতঃপর ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রী লাভ করেন।
কর্মজীবন
পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব হিসেবে ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। অর্থনৈতিক পরামর্শক হিসেবে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৎকালীন পাকিস্তান দূতাবাসে যোগদান করেছিলেন। চাকুরীরত অবস্থায় পাকিস্তান কর্মপরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ও উপ-সচিব ছিলেন। ঐ সময় তিনি পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন ও পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসে পেশ করেন।
পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও, ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহিত।
বাংলাদেশ থেকে এসকাপের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে দায়িত্বপালন করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।[১]
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
ওয়াশিংটনে তৎকালীন পাকিস্তানের দূতাবাসে প্রথম কূটনীতিবিদ হিসেবে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে নিজ অবস্থান তুলে ধরে চাকুরী থেকে ইস্তফা প্রদান করেন মুহিত।
পরে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়াশিংটন দূতাবাসে ইকনমিক কাউন্সেলরের দায়িত্ব পালেন করেন তিনি।
সরকারী চাকুরী থেকে অবসরগ্রহণ
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি চাকুরীজীবন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। এরপর তিনি ফোর্ড ফাউণ্ডেশনের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন সংস্থা বা ইফাদেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
১৯৮২-১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এরশাদ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন মুহিত। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ, আইডিবি এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে
আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহা ঐক্যজোটের মনোনয়নে সিলেট-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হন। ঐ নির্বাচনে জনতার রায়ে তিনি ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে নির্বাচিত হন। ৬ জানুয়ারী, ২০০৯ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন। [২]
ব্যক্তিগত জীবন
বৈবাহিক সূত্রে তার স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের সংসারে দুই পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছে। সামিয়া মুহিত একজন ব্যাংকার এবং মুদ্রা নীতি খাতের একজন বিশেষজ্ঞ। তাদের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহেদ মুহিত একজন বাস্তুকলাবিদ এবং কনিষ্ঠ পুত্র সামির মুহিত একজন শিক্ষক।
এছাড়া আবুল মাল আবদুল মুহিতের অন্যতম পরিচয় হচ্ছে তিনি একজন লেখকও বটে। স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘স্মৃতি অম্লান ১৯৭১’-সহ এ পর্যন্ত তিনি ২১টি পুস্তক রচনা করেছেন। পুস্তকগুলোর বিষয়বস্তু মূলতঃ প্রশাসন এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কীয়।
লেখক জীবন
তিনি বহু গ্রন্থের লেখক। তিনি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় লিখে থাকেন।
সাফল্য গাথা
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মুহিতকে তমঘা ই খিদমত পদকে ভূষিত করে।
১৯৮৪ এবং ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল মুহিত প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ফেলো হিসেবে ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন গড়ে তোলেন। বাপা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। পরিকল্পনাবিহীন অবস্থায় নগরায়ণ বন্ধ ও পরিবেশ রক্ষা করা, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরকরণ, বিনোদন পার্ক সৃষ্টিতে তার ভূমিকা রয়েছে।